দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখার জকপুর ও মাদপুর স্টেশনের মাঝে মহিশা গ্রামে বিখ্যাত মা মনসা মন্দির।
মন্দিরের ইতিহাস
লোককথা অনুসারে, এখন যেখানে মনসা মা এর মন্দির আছে সেখানে ও তার চারপাশে জঙ্গল ছিল। আনুমানিক চারশো বছর আগে জকপুরে যোগেশ্বর রায় নামে এক জমিদার ছিল। তার অনেকগুলো গরু ছিল । গরু দেখাশোনার জন্য একজনকে রেখেছিলেন। সেই গরু বাগাল এখন যেখানে মনসা মা এর মন্দির আছে তার চারপাশে গরু চরাতেন। হঠাৎ একদিন জমিদার জানতে পারলেন তার গরুগুলো কম দুধ দিচ্ছে আগের তুলনায়। জমিদার গরু বাগালকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে এর উত্তর জানেনা। জমিদার এরপর গরু বাগালকে বললেন গরুগুলোকে যত্ন করতে ও গরুগুলোর দিকে নজর দিতে। জমিদারের নির্দেশ মতো বাগাল গরুগুলোকে চোখে চোখে রাখতেন। এরপর গরু বাগাল একদিন দেখলেন গরুগুলো জঙ্গলের একটি বিশেষ জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়। সেখানে একটি উইয়ের ঢিপে অনেকগুলো সাপ থাকে, গরুগুলো সেখানে নিজে থেকে দুধ দেয় ও সাপগুলো দুধ খায়। এই দৃশ্য দেখে গরু বাগাল জমিদারকে সমস্ত ঘটনা বলেন। জমিদার গরু বাগালের কথা শুনে নিজে আসেন দেখতে এবং তিনিও একই দৃশ্য দেখতে পান। একদিন ভোর রাতে জমিদারের স্বপ্নে মা মনসা এসে বলেন ঐখানে উই ঢিপিতে থাকেন। জমিদারকে মা মনসা পুজো করতে আদেশ দেন প্রতিষ্ঠিত করে। স্বপ্নাদেশ পেয়ে জমিদার যাওয়া আসার জন্য রাস্তা তৈরি করতে ও চারপাশের জঙ্গল পরিষ্কার করতে বলেন। এরপর মায়ের বেদি তৈরি করে জমিদার নিয়মিত পুজোর আদেশ দেন।
মন্দিরের চারপাশে পাঁচিল ঘেরা আছে, কিন্তু ছাদ নেই। যখনই মন্দিরে ছাদ দেওয়া হয় তখনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটে, তাই খোলা আকাশের নিচে পুজো করা হয়। মন্দিরে কোনো পুরোহিত নেই ও পুরোহিত দিয়ে পুজো করা হয় না। শুধুমাত্র বছরে একবার যখন মহাপুজা করা হয় তখন পুরোহিত দিয়ে পুজো করা হয় ও ঐদিন মনসা মায়ের মুর্তি এনে পুজো করা হয়। পুজো হওয়ার পর বাকি দিন সেখানে মা মনসার মুর্তি রাখা হয় না।
পূজা দেওয়ার নিয়মাবলী
১ ) এই মন্দিরে বছরের সমস্ত দিনই মায়ের পূজা দেওয়া হয় । প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার অনেক লোক পূজা দিতে আসেন।
২) এই মনসা মায়ের মন্দিরে পূজা দেওয়ার জন্য হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান সহ যে কোন ধর্মের মানুষ মায়ের পূজা করতে পারেন । নারী পুরুষ সবাই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন।
৩) মায়ের মন্দিরে পূজা দিতে গেলে সমস্ত পূণ্যার্থীগণকে অবশ্যই স্নান করতে হবে এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ।
৪ ) এই মন্দিরে কোন ব্রাহ্মণ দ্বারা পূজা করা হয় না। তাই পূণ্যার্থীকেই মায়ের পূজা করতে হয় ।
a) দক্ষিণার জন্য কমিটির পক্ষ থেকে কোন প্রকার চাপ দেওয়া হয় না ৷ পূণ্যার্থীগন স্বেচ্ছায় অর্থদান করেন,তাতেই সারা বছর মায়ের নানা প্রকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়।
৬) এই মন্দিরে পূজা ও মানত করার জন্য বাধ্যতামূলক কোন নিয়ম নাই ৷ পূণ্যার্থী গনের যা মন চায়,তাই দিয়েই পূজা ও মানত করতে পারেন ।
৭) মা মনসাকে ভোগ দিতে চাইলে নিজেকেই সবকিছু করতে হবে।
মা মনসার মন্দিরে কিভাবে যাবেন?
খড়গপুর রেলস্টেশন থেকে লোকাল ট্রেনে করে জকপুর অথবা মাদপুর স্টেশনে নেমে টোটো বা ভাড়া গাড়িতে করে মন্দিরে যেতে পারবেন। আবার হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে করে মাদপুর বা জকপুর স্টেশনে নেমে একইভাবে মন্দিরে আসতে পারবেন।
বিশেষ তিথি কখন ? মেলা কবে হয় ?
প্রতিবছর চৈত্রমাসের তৃতীয় মঙ্গলবারে মনসা মায়ের মহাপূজা আর মেলা হয় । মেলার দিন প্রচুর ভিড় হয়, তাই নিজের হাতে মা মনসাকে পুজো করতে হলে অন্যদিন যেতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ